আলু পোস্ত রেসিপি – আলু ও পোস্তদানা দিয়ে তৈরি এক সহজ ও লোভনীয় রান্না

আলু পোস্ত – বাঙালির ঘরোয়া খাবারে এক অমোঘ আকর্ষণ
"আলু পোস্ত" – এই দুটি শব্দ শুনলেই মুখে জল আসে অনেক বাঙালির। সরষের তেল, পোস্ত বাটা আর আলুর সংমিশ্রণে তৈরি এই পদটি সাধারণ হলেও স্বাদে অসাধারণ। পশ্চিমবঙ্গের বহু ঘরে এটি প্রায় সপ্তাহে একাধিকবার রান্না হয়, বিশেষ করে গরমের দিনে। আজ আমরা শিখে নেব কিভাবে খুব সহজে বাড়িতে বানানো যায় এই প্রিয় পদটি – **আলু পোস্ত**।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- আলু – ৩–৪টি মাঝারি আকারের (ছোট টুকরো করে কাটা)
- পোস্ত (পপি সিড) – ৩ টেবিল চামচ (১ ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে বাটা)
- সবুজ কাঁচা লঙ্কা – ২–৩টি
- কালোজিরে – ১/২ চা চামচ
- সরষের তেল – ৩–৪ টেবিল চামচ
- নুন – স্বাদমতো
- হলুদ গুঁড়ো – ১/২ চা চামচ
- জল – প্রয়োজন অনুযায়ী
আলু পোস্ত রান্নার প্রণালী ধাপে ধাপে
১. পোস্ত বাটা তৈরি: পোস্ত ভালোভাবে ধুয়ে জল ছেঁকে ১ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। তারপর সামান্য জল দিয়ে বেটে নিন। চাইলে ১টি কাঁচা লঙ্কাও একসাথে বেটে নিতে পারেন আরও ঝাঁজ বাড়াতে।
২. আলু সিদ্ধ করা: আলুগুলো খোসা ছাড়িয়ে ছোট টুকরো করে কেটে হালকা করে সেদ্ধ করে নিতে পারেন, তবে অনেকে কাঁচা আলুই সরাসরি ভেজে রান্না করেন।
৩. তেলে ফোড়ন: কড়াইতে সরষের তেল গরম করে তাতে কালোজিরে ও ফালি করে কাটা কাঁচা লঙ্কা ফোড়ন দিন। গন্ধ বেরোলে বুঝবেন ফোড়ন তৈরি।
৪. আলু ভাজা: এবার আলুগুলো দিয়ে মাঝারি আঁচে নাড়তে থাকুন। একটু নরম হয়ে আসলে হলুদ গুঁড়ো ও নুন দিন। ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
৫. পোস্ত দেওয়া: আলু হালকা ভাজা হলে পোস্ত বাটা দিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে ভালোভাবে মেশাতে থাকুন। পোস্ত যেন কড়াইয়ে লেগে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
৬. জল দেওয়া: মিশ্রণটা একটু শুকনো হয়ে গেলে সামান্য জল দিন যাতে তরকারিটা মাখা মাখা হয়। বেশি জল দিলে স্বাদ হারাতে পারে।
৭. রান্না শেষ: ৫–৭ মিনিট ঢেকে রান্না করুন। মাঝে মাঝে নেড়ে দেখুন পোস্ত ভালোভাবে কষা হয়েছে কিনা। শেষে ওপরে আরেকটু কাঁচা লঙ্কা ও ১ চামচ কাঁচা সরষের তেল ছড়িয়ে দিন – আর হয়ে গেল আপনার প্রিয় "আলু পোস্ত"।
পরিবেশন পদ্ধতি
আলু পোস্ত খেতে ভালো লাগে গরম গরম ভাতের সাথে। পাশে যদি থাকে পাটের শাক ভাজা, কচু শাক বা ডাল, তাহলে জমে ক্ষীর। যারা ঝাল পছন্দ করেন, তাঁরা কাঁচা লঙ্কা একটু বেশি ব্যবহার করতে পারেন।
রান্নার টিপস ও কৌশল
✔ পোস্ত বাটার সময় খুব বেশি জল দেবেন না, এতে স্বাদ薄 হয়ে যায়।
✔ যদি সময় না থাকে, শুকনো পোস্ত পাউডার ব্যবহার করেও বানানো যায়।
✔ একটু ঘি দিয়ে পরিবেশন করলে স্বাদ আরও বাড়ে।
✔ বেশি পোস্ত দিলে আলু পোস্ত আরও সুস্বাদু হয় – তবে পোস্তের দাম মাথায় রেখে ব্যালান্স বজায় রাখুন।
শেষ কথা
"আলু পোস্ত" একটি সহজ, নিরামিষ এবং প্রতিদিনের খাওয়ার আদর্শ পদ। এর সরলতা আর মাটির গন্ধময় স্বাদ বাঙালির খাদ্য-সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করে। আপনি যদি কখনও বাঙালি খাবারের প্রেমে পড়ে থাকেন, তাহলে এই রেসিপি আপনার অবশ্যই একবার ট্রাই করা উচিত। ঘরোয়া খাওয়ার তালিকায় এই পদটিকে জায়গা দিন, দেখবেন দুপুরের খাবার হয়ে উঠবে আরও আনন্দময়।