শুক্তো রেসিপি – এক অনন্য তিতকুটে স্বাদের বাঙালি রান্না

শুক্তো রেসিপি – এক অনন্য তিতকুটে স্বাদের বাঙালি রান্না

শুক্তো – বাঙালির প্রিয় তিতকুটে অথচ সুস্বাদু রান্নার গল্প

শুক্তো – নাম শুনলেই মনে পড়ে যায় মায়ের হাতে রান্না করা দুপুরবেলার গরম ভাতের সাথে পরিবেশিত এক অনন্য তিতকুটে স্বাদের তরকারি। এটি বাঙালি রান্নার একটি অপরিহার্য অংশ, বিশেষ করে কোনো শুভ অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুক্তো পরিবেশন করা হয়। শুক্তোর স্বাদ যেমন তিতকুটে, তেমনই এতে থাকে নরম সবজির মিশ্রণ, যা মুখের রুচি খুলে দেয়। আজ আমরা শিখে নেব শুক্তোর একটি সহজ এবং সুস্বাদু রেসিপি যা আপনি বাড়িতে খুব সহজেই বানাতে পারেন।

প্রয়োজনীয় উপকরণ

  • বেগুন – ১টি মাঝারি আকারের, লম্বালম্বি কাটা
  • পটল – ৩–৪টি, খোসাসহ কাটা
  • সজনে ডাটা – ২–৩টি, ছোট টুকরো
  • বড়ি – ১/২ কাপ (বাড়িতে তৈরি বা বাজার থেকে কেনা)
  • কাঁচা কলা – ১টি, খোসা ছাড়ানো ও কাটা
  • আলু – ১টি, লম্বা কাটা
  • বিটারগার্ড (করোলা) – ১টি, পাতলা কাটা
  • রাধুনী – ১/২ চা চামচ
  • মেথি – ১/২ চা চামচ
  • আদা বাটা – ১ চা চামচ
  • সরষের তেল – ৩ টেবিল চামচ
  • নুন – স্বাদমতো
  • চিনি – ১ চা চামচ (ঐচ্ছিক)
  • দুধ – ১/২ কাপ
  • ঘি – ১/২ চা চামচ

শুক্তো রান্নার প্রণালী ধাপে ধাপে

১. সবজিগুলি প্রস্তুত করুন: সব সবজি ধুয়ে লম্বা করে কেটে রাখুন। করোলাকে হালকা নুন মাখিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন।

২. বড়ি ভাজা: কড়াইতে সরষের তেল গরম করে বড়িগুলি লালচে করে ভেজে তুলে নিন।

৩. করোলা ভাজা: বড়ি ভাজার পর সেই তেলেই করোলাগুলি হালকা ভেজে তুলে নিন। করোলার তিতকুটে স্বাদ কমাতে এটি জরুরি।

৪. মশলা ফোড়ন: এবার কড়াইতে আর একটু তেল দিয়ে রাধুনী ও মেথি ফোড়ন দিন। এরপর আদা বাটা দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করুন।

৫. সবজি দেওয়া: একে একে বাকি সব সবজি কড়াইয়ে দিয়ে ৫–৭ মিনিট নাড়ুন। ঢেকে দিন যাতে সবজি নরম হয়। নুন ও সামান্য চিনি দিয়ে দিন।

৬. দুধ দেওয়া: সবজি সেদ্ধ হয়ে গেলে দুধ দিন। এতে রেসিপিতে এক বিশেষ কোমলতা আসবে। দুধ দিয়ে আরও ৫ মিনিট রান্না করুন।

৭. বড়ি ও করোলা ফেরত: এবার ভাজা বড়ি ও করোলা দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। ২–৩ মিনিট রান্না করুন।

৮. ঘি দিয়ে শেষ ছোঁয়া: শেষে ১/২ চা চামচ ঘি দিয়ে নামিয়ে নিন গ্যাস থেকে। ঘ্রাণে ভরে উঠবে পুরো ঘর।

পরিবেশন: শুক্তো সবচেয়ে ভালো লাগে গরম ভাতের সাথে। সঙ্গে একটু লেবু ও কাঁচা লঙ্কা থাকলে আরও জমে যায়। এটি একটি নরমাল, নিরামিষ, হালকা স্বাদের কিন্তু দারুণ পুষ্টিকর পদ।

রান্নার টিপস

✔ করোলা বেশি দিলে অতিরিক্ত তেতো হয়ে যেতে পারে, তাই পরিমাণে রাখুন।
✔ দুধ না দিলে জল দিয়েও রান্না করা যায়, কিন্তু দুধে স্বাদ নরম ও মোলায়েম হয়।
✔ রাধুনী না থাকলে শুকনো পাঁচফোড়ন ব্যবহার করতে পারেন।
✔ শুক্তো একটি আয়ুর্বেদিক গুণসম্পন্ন খাবার – এটি হজমে সাহায্য করে।

শেষ কথা

আজকের এই শুক্তো রেসিপি আপনার পছন্দ হলে বাড়িতে একবার তৈরি করে দেখুন। বিশেষ করে বর্ষাকাল বা গরমকালে এই রকম হালকা অথচ স্বাদের খাবার শরীর ও মন দুটোই ভালো রাখে। বাঙালি রন্ধনশৈলীর অনন্য নিদর্শন শুক্তো, আপনিও তৈরি করুন ও ভাগ করে নিন পরিবারের সাথে।