রামকিঙ্কর বেইজ ও বিশ্বভারতী আর্ট গ্যালারি – শান্তিনিকেতনের শিল্পধর্মী যাত্রা

রামকিঙ্কর বেইজ ও বিশ্বভারতী আর্ট গ্যালারি – শান্তিনিকেতনের শিল্পধর্মী যাত্রা

রামকিঙ্কর বেইজ – বাংলার আধুনিক ভাস্কর্যকলার পথিকৃৎ

শান্তিনিকেতনের নাম শুনলেই যে ক’টি নাম প্রথমেই মনে পড়ে, তার মধ্যে রামকিঙ্কর বেইজ অন্যতম। তিনি ছিলেন ভারতের আধুনিক ভাস্কর্য আন্দোলনের পথিকৃৎ। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা এই শিল্পী বাংলা তথা ভারতের শিল্পধারায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিলেন। তাঁর ভাস্কর্যগুলো শুধু পাথর আর ব্রোঞ্জের নয়, বরং মানুষের জীবনের গভীর অনুভূতির প্রকাশ।

শান্তিনিকেতনের অলিগলিতে ঘুরলে ‘সুজাতা’, ‘সাঁওতাল পরিবার’ বা ‘রবীন্দ্রনাথ’ এর মতো তাঁর অসাধারণ ভাস্কর্যগুলো সহজেই নজরে পড়বে। এগুলো কেবল শিল্প নয়, বরং সময় ও সমাজের নীরব সাক্ষ্য। ১৯৩০-এর দশকে তিনি যেভাবে সাঁওতাল জীবনের সংগ্রাম ও সৌন্দর্য তুলে ধরেছিলেন, তা আজও দর্শকদের মোহিত করে।

বিশ্বভারতী আর্ট গ্যালারি – শান্তিনিকেতনের হৃদয়জুড়ে শিল্পের কেন্দ্র

শান্তিনিকেতনের আরেকটি অমূল্য রত্ন হল বিশ্বভারতী আর্ট গ্যালারি। এখানে সংরক্ষিত আছে রামকিঙ্কর বেইজ, নন্দলাল বসু, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় সহ বহু বিখ্যাত শিল্পীর চিত্রকর্ম ও স্কেচ। এই গ্যালারি শান্তিনিকেতনের সংস্কৃতি ও শিল্পচর্চার বহিঃপ্রকাশ।

যারা শিল্প ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই গ্যালারি এক পরম ভাণ্ডার। এখানে প্রবেশ করলেই মনে হবে যেন রবীন্দ্রনাথের ভাবনা ও নন্দলালের তুলি হাতে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে। পুরনো দিনের সেই মননশীল ও সৃজনশীল পরিবেশের গন্ধ এখনো বাতাসে মিশে থাকে। গ্যালারিতে অনেক চিত্রকর্মের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থাকে যা দর্শনার্থীদের বোঝার জন্য খুব সহায়ক।

যেভাবে পৌঁছাবেন ও ঘুরে দেখবেন

কলকাতা থেকে বোলপুর শান্তিনিকেতন যাওয়া খুবই সহজ। ট্রেনে মাত্র ২.৫ থেকে ৩ ঘণ্টা লাগে। বোলপুর স্টেশন থেকে অটো বা টোটো করে সহজেই কলাভবন ও আর্ট গ্যালারিতে পৌঁছানো যায়। রামকিঙ্কর বেইজের ভাস্কর্যগুলো বেশিরভাগই ওপেন স্পেসে বা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই রয়েছে। তাই পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে গাইড সহ ঘোরা ভালো।

বিশ্বভারতী আর্ট গ্যালারির প্রবেশমূল্য নামমাত্র, তবে রবিবার বন্ধ থাকে। ছবি তোলার নিয়ম সম্পর্কে আগেই জেনে নেওয়া ভালো। স্থানীয় গাইড অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত মানচিত্র ব্যবহার করে সম্পূর্ণ ভ্রমণটি আরও অর্থবহ ও উপভোগ্য করা যায়।

ভ্রমণ টিপস ও কিছু দরকারি তথ্য

  • সকাল সকাল ঘোরার প্ল্যান করুন, কারণ দুপুরের পর অনেক জায়গা বন্ধ হয়ে যায়।
  • জুতো ও পোশাক আরামদায়ক রাখুন কারণ অনেক হাঁটা পড়ে।
  • ভাস্কর্য ও গ্যালারিতে হাত না দেওয়াই শ্রেয়।
  • স্থানীয় দোকান থেকে রামকিঙ্করের কাজের উপর ছোট বুকলেট ও পোস্টার পাওয়া যায়।

রামকিঙ্কর বেইজ ও বিশ্বভারতী আর্ট গ্যালারির মতো জায়গা একমাত্র সেই মানুষদের জন্য যারা শিল্প, সংস্কৃতি ও ইতিহাস ভালোবাসেন। শান্তিনিকেতনের ছায়াঘেরা পরিবেশে এ যেন এক অপার আত্মিক অভিজ্ঞতা। আপনার পরবর্তী ছুটির তালিকায় নিশ্চয়ই এই স্থাপনাগুলিকে রাখবেন।